“সন্ধ্যাকালীন স্নান”
(মেলানকলি অব দ্য কোরা)
সন্ধ্যা স্নানের পুরোটা সময় জুড়ে জল পড়ার শব্দটায় ধিয়ান লেগে
থাকলাম। জলের প্রতিটি দানায় দানায় অসংখ্য টৌমনি তার একটাই
কোরা বাজাচ্ছিল,
যে কোরাটি তার বাপের মতন প্রিয়।
একটা অফ-হোয়াইট কালার টাইলসের চারকোনা ঘরের ভিতর বিবর্ণ ডুমুরের
হাহাকার সেঁটে আছে। আজ সন্ধ্যা স্নান ঘরে পার্বতীপুর জঙশনের কিছু
শীতকালীন ব্যক্তিগত মুহূর্ত ঢুকে পড়েছে।
( আমার কয়েকটা শীতের দুপুর আর হলুদ সোয়াটারের সুতো রোদপোড়া জঙশনের ওভারব্রীজটার বাম সাইডের সিঁড়িতে এখনও পড়ে আছে বোধহয়)
( আমার কয়েকটা শীতের দুপুর আর হলুদ সোয়াটারের সুতো রোদপোড়া জঙশনের ওভারব্রীজটার বাম সাইডের সিঁড়িতে এখনও পড়ে আছে বোধহয়)
সমস্ত স্নানটা জুড়ে একবার দরজায় হেলান দিয়ে, আর একবার
আয়নার ঝাপসা ছায়ায় ১৭ বছর বয়সি যে শীতকালটা দাঁড়িয়ে থাকল, তাকে আমি ওভাবেই রেখে বের হলাম।
বাইরে তখন মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়েছে।
জলপাইয়ের তলায় ছোপ ছোপ অন্ধকারে ফুটে উঠতেছে নানীমায়ের চেক রুমালের গ্রাফিতি ।
বাইরে তখন মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়েছে।
জলপাইয়ের তলায় ছোপ ছোপ অন্ধকারে ফুটে উঠতেছে নানীমায়ের চেক রুমালের গ্রাফিতি ।
তখনও আমার ভেজা চুল বেয়ে কোরার ধুন গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল
// কোরা: আফ্রিকান বাদ্যযন্ত্র।
টৌমনি: বিখ্যাত কোরা বাদক।
ধিয়ান(রঙপুরের একটি আঞ্চলিক শব্দ): মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কিছু করা, দেখা, বা শুনা৷
ধুন(হিন্দি শব্দ): সুর৷ //
“সন্ধ্যার স্বেচ্ছাচারিতা ”
এইখানে সন্ধ্যাটা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আমড়া গাছের তলে
হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। আমার মনে হইল, দরিয়ার তলানির
অন্ধকার তার গায়ে। চারদিকে
বোরো ধান সিদ্ধ করার বাসি গন্ধ ভুরভুর করতেছিল। ছাদটায় তখন দোয়ানী বাড়ির চাতালের এ্যাপোফেনিয়া ফুটে উঠতেছিল৷
বোরো ধান সিদ্ধ করার বাসি গন্ধ ভুরভুর করতেছিল। ছাদটায় তখন দোয়ানী বাড়ির চাতালের এ্যাপোফেনিয়া ফুটে উঠতেছিল৷
আমি ছাদের এক কর্ণারে ট্যাঙ্কির গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছিলাম৷
ভাবতেছিলাম কিছু নিয়ে। ভাবনায় আঙুর গাছটাও ছিল (তার
এই ভাবে তিনতলা অবধি উঠে আসাটা আমার বিপ্লব লাগে কখনও কখনও)।
আর এইদিকে সন্ধ্যাটা আমারে দেখেও দেখেনি এমন ভাব নিয়ে বর্ণালীর মাঠে লাফ দিয়ে চলে গেল। পাশের বাড়ির ছাদে তখন মরিয়ম আপা দাঁড়িয়ে ছিল। মাঠে ছেলেদের ফুটবল খেলা নিবিড় হইয়া দেখতেছিল কিংবা দেখতেছিল না, আমি বুঝতে পারতেছিলাম না ।
তার খানিক পরে, চাঁপাই নবাবগঞ্জের পুরান ট্রেনটা যাইতেছিল।
নাককাটি কালী মন্দিরে শাঁখ বাজতেছিল।
দূরের গৃহস্থ বাড়ির জানালা দিয়ে রাধন-বারনের ধোয়া বাহির হইতেছিল।
মরিয়ম আপাও নিচে নেমে যাইতেছিল;
আর বারবার গায়ের ওড়নাটা ঝাড়তেছিল
তার ওড়নায় সন্ধ্যার ভেজা অন্ধকার লেগে শুকিয়ে গেছে।
আর এইদিকে সন্ধ্যাটা আমারে দেখেও দেখেনি এমন ভাব নিয়ে বর্ণালীর মাঠে লাফ দিয়ে চলে গেল। পাশের বাড়ির ছাদে তখন মরিয়ম আপা দাঁড়িয়ে ছিল। মাঠে ছেলেদের ফুটবল খেলা নিবিড় হইয়া দেখতেছিল কিংবা দেখতেছিল না, আমি বুঝতে পারতেছিলাম না ।
তার খানিক পরে, চাঁপাই নবাবগঞ্জের পুরান ট্রেনটা যাইতেছিল।
নাককাটি কালী মন্দিরে শাঁখ বাজতেছিল।
দূরের গৃহস্থ বাড়ির জানালা দিয়ে রাধন-বারনের ধোয়া বাহির হইতেছিল।
মরিয়ম আপাও নিচে নেমে যাইতেছিল;
আর বারবার গায়ের ওড়নাটা ঝাড়তেছিল
তার ওড়নায় সন্ধ্যার ভেজা অন্ধকার লেগে শুকিয়ে গেছে।
"সন্ধ্যাটা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেউ"
বিকেল বেলার পড়ার টেবিলটা একটা চারকোণা মাদুলি হয়ে যায়। মাদুলির
ভিতরে লাল সাবানের গুড়ো দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে একটা ঘুমপাহাড়৷ আর আমার সমস্তটা
ঢুলুঢুলু চোখ।
প্রতিবেশী তরূণীটি ছাদে আসে
কিছুটা প্রেমিকার মতন পিপাসায় সামনে দাঁড়ায়
আমার হাত তলপেট হাতড়ায়, নাভির ভূগোলে
অথচ, চুমু খাবার আগে আজকাল আমার হাই উঠে শুধু
কিছুটা প্রেমিকার মতন পিপাসায় সামনে দাঁড়ায়
আমার হাত তলপেট হাতড়ায়, নাভির ভূগোলে
অথচ, চুমু খাবার আগে আজকাল আমার হাই উঠে শুধু
সন্ধ্যার কিছু পরে তখনও বেখেয়ালে তার বাটিক ওড়নার সুতো আঙুলে
পেঁচিয়ে নিতে থাকি ৷ একটা ঝটিকা বাতাস এসে আমারে শেখপাড়ার পাতকুয়োটায় ধাক্কা মেরে
ফেলে দেয়। একটা আধুলী পড়ে যাবার মতন শব্দ করে পড়ে যাই নিচে...
অতলে।
আমি আরও একবার বিলীন হয়ে যাই মরে যাবার মতন করে।
আমি আরও একবার বিলীন হয়ে যাই মরে যাবার মতন করে।
"আমি নাই" এমন অবস্থায় একটা সন্ধ্যা কী ভাবে চালু থাকে? কেমন করে অন্ধকার লেপে দিয়ে দিয়ে হয়ে উঠে একটা রাত্রিপুর ? এই সব আমি দেখি আমিহীন হয়ে।
যে ছাদে এসেছিল সে চলে গেছে, একটা ফোনকল পেয়ে। দুপুরে
শুকোতে দেয়া তার ভেজা কাপড় দড়িতে ঝুলছে এখনও। হঠাৎ তারে আমার
একটা আগন্তুক সন্ধ্যা মনে হয়!
চোখের সামন থেকে সন্ধ্যাটা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেউ।
সন্ধ্যাটা কেউ গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নাটাইয়ে সুতোর মতন করে।
চোখের সামন থেকে সন্ধ্যাটা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেউ।
সন্ধ্যাটা কেউ গুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নাটাইয়ে সুতোর মতন করে।
আমি বিষাদে মুখ ঘুরিয়ে নিই, উত্তরপাড়ে তাকাই
দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা
ওখানে বহুকাল আগে ঘুড়ি ওড়া সন্ধ্যাগুলোর নির্বাসন
দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা
ওখানে বহুকাল আগে ঘুড়ি ওড়া সন্ধ্যাগুলোর নির্বাসন
(চিত্রঋণ : Mohammad Ehsai. Untitled, 1974)
তিনটে কবিতাই বেশ স্মার্ট লাগল আমার কাছে । বেশ একটা সন্ধের আশ্লেষ জমে উঠল মনের মধ্যে ।
ReplyDeleteপড়বার জন্য ধন্যবাদ ।
Deleteদীর্ঘদিন মনে থাকার মত... সংগ্রহে রাখার মত।
ReplyDeleteশুনে ভাল লাগলো। আপনাকে ধন্যবাদ ।
Deleteখুব ভালো লাগল।।
ReplyDelete