একজন বন্ধু বলছিল...
আর্ট ফিলিম আর কমার্শিয়াল ফিলিম চেনার সহজ উপায় কী জানিস? বোকা বোকা ঘাড় নেড়ে
বোঝালাম, না জানিনা তো! বন্ধুটি বলল কমার্শিয়াল ফি্লিমে সবাই গাক গাক করে কথা বলে,
টিভি বা কমপিউটারে ভল্যুম যতটা সম্ভব কমিয়ে দিলে রক্ষে, আর আর্ট ফি্লিমে ভল্যুম
শেষ সীমায় নিয়ে গেলেও কিছু শোনা যাবে না। ‘সগোদক্তি না হলিউড স্টাইল’এ কথা বলে, কে
জানে? বন্ধুকে বলতে যাচ্ছি্লাম... বা! বেশ...। তার আগেই আবার বলতে শুরু করলো, আর
একটা ব্যাপার দেখলেও বুঝতে পারবি আর্ট ফিলিম হচ্ছে। কী? কোনো হিসি করার দৃশ্য কিন্তু
কমার্শিয়াল ফিলিমে দেখতে পাবিনা। হিসি
করার সিন মানেই অবধারিত বুঝে নিবি আর্ট ফিলিম হচ্ছে। আমি আনন্দে হাততালি দিয়ে
উঠলাম...আসলে যতটা না বন্ধুর সমর্থনে তার থেকেও একটা ফিল্মের কথা মনে পড়ে যাওয়ায়। বহুদিন
আগে গৌতম ঘোষের ‘পার’ (১৯৮৪) সিনেমার একটা দৃশ্যের কথা। জোতদার গুণ্ডারা আলো আঁধারে দাঁড়িয়ে হিসি করছিল, ঠিক সে সময়ই তাদের ওপর আক্রমণ হয়। হতে পারে ওটাই বাংলা
সিনেমায় প্রথম ‘অফবিট’ দৃশ্য। অন্তত আমার জীবনে সেই প্রথম অভিজ্ঞতা। চমৎকার বাস্তব
উপস্থাপনা সেদিন হয়তো দাগ কেটেছিল তাই আজও বেশ মনে আছে। এর পরই বাংলা আর্ট ফিল্মে যেন হিসিবিপ্লব শুরু হলো। এই সেদিন টিভিতে সিনেমার বুদ্ধবাবুর একটি আর্ট ফিল্মে
গণ-হিসির দৃশ্য দেখলাম। আর হিসি করলে এ্যাতো হাঁক গাঁক করে শব্দ করে মানুষ, এও
বাপের জন্মে জানতাম না। আর্ট ফিলিম বলে কওওতা, হতিই পারে।
বন্ধুর কথা
ভাবছিলাম...। মন্দ বলেনি তো।
আমরাও সত্যজিৎ মৃণাল, ঋত্বিক দেখে বড় হয়েছি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রথম দিকের দু
একটা ছবির কথাও বলতে হবে। উৎপলেন্দু চক্রবর্তী আশা জাগিয়ে অচিরে নিভে গেলেও কিছু
ছবিতে দাগ রেখে গিয়েছেন বৈকী। কিন্তু কৈ, এমন আর্টের চক্করে তো তাদের কখনও পড়তে
হয়নি! সব সময় মনে হয়েছে একটা ভালো সিনেমা দেখছি...কখনও মনে হয়নি একটা আর্টের
সিনেমা...এখানে অন্য অন্য জিনিস দেখা যাবে। এখানে এমন আস্তে কথা বলা হবে যে প্রায়
শোনাই যাবে না। আবার আস্তে কথা বলার কত কতকথার গপ্পও বলা হবে। বাপের জন্মে এসব
শুনেছি বলে তো মনে পড়ে না। কেনো রে বাবা! হরদমই তো সত্যজিৎ মৃণাল, ঋত্বিকদের ছবি দেখছি, কৈ একবারও
তো মনে হয় না কেঊ চিৎকার করছে বা এমন বিশেষ কোনও অর্থবহ কারণে আস্তে কথা বলছে যে
দর্শক ভালোকরে শুনতেই পাবেনা! তবে হ্যাঁ, কেউ যদি বলে আপনার কানের দোষ, তাহলে কী কিছু বলার থাকে?
আর্টিস্টিক ভাবে আস্তে আস্তে একটা কথাই বলতে পারি এই সময়েই তো ওই ওঁদের ছবিও
দেখছি, কোন পরশপাথরের ছোঁয়ায় তখন কানের দোষ উবে যায়? তো যেকথা বলছিলাম। এই সব
চক্করের উৎস কোথায়? আচ্ছা, বুম্বাগড়ের রাজার হাত ধরে কী? হতে পারে। শত শত বস্তাপচা
সিনেমায় চোয়াল চিবিয়ে চিবিয়ে সারাজীবন চিৎকার করে হঠাৎ আর্টের জগতে প্রবেশ করলে যা হয়
আর কি! পরিচালকদের প্রধান শর্তই তখন বোধহয়
থাকে…. বাবা আর যাই করো চিৎকার কোরো না।
চিৎকার না হয় করলেন না, কিন্তু চোয়ালের দোষ ঢাকা যাবে কী? চিৎকার করলে যেটুকু শোনা
যেত চিৎকার না করে চোয়াল চেবানোতে সব ঢাকা পড়ে কেলো হয়ে গেলো। জানিনা কাদের
দুর্ভাগ্য! আমাদের মতো বোদা দর্শকদের, নাকি তামাম বাংলা সিনেমা জগতের? এ প্রসঙ্গে গোষ্ঠগোপালের
বাবার একটা কথা মনে পড়ছে, “আল্লা বড়ো চদু গরুর গলায় মধু”, বিস্তারিততে যাবো না,
আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে নিতে পারবেন। তাই হয়তো এই মানের একজন অভিনেতার ডেট না
পেলে বাংলা সিনেমার পরিচালকরা নতুন সিনেমার কথা নাকি ভাবতেও পারেন না! তিনিই ‘প্রোসেনজিত’,
পরে ‘পোয়েনজিত’ হয়ে বুম্বাগড়ের রাজা হয়েছেন। এখন আর্টের জগতে এসেছেন বলে বুম্বাদা
ছাড়া কিছু বলে ডাকা যাবে কী? শুরু বোধহয় সেই মানিকদা থেকে। হয়তো এই সেদিনের ছোড়া,
দাদুর বয়সীকেও দিব্যি মানিকদা বলছে। তার পর পুলুদা, রীনাদি, রণদা হয়ে বুম্বাদা।
যে কথা বলছিলাম, এই যে আস্তে
আস্তে কথা শুনতে না পাওয়া আর্ট ফিলিম আমদানি হলো তবে কার হাত ধরে? আসলে সত্যজিৎ
রায়, মৃণাল সেনরা অভিনেতা অভিনেত্রী তৈরি করতেন।
চলচ্চিত্রের ধারেপাশে যারা কোনওকালে ছিলেন না এমন অনেককে অভিনয় করিয়ে প্রতিষ্টিত
করেছেন, এমন উদাহরণ অজস্র রয়েছে। সঠিক মানানসই চরিত্র না পাওয়ার জন্য মাসের পর মাস
কেটে যেত, বছরও। পথের পাঁচালির অপু দুর্গা-র চরিত্র খোঁজার কথা আমরা বিভিন্ন
পত্রপত্রিকাতে পড়েছি। সত্যজিৎ রায় চরিত্রের প্রয়োজনে এমন অনেককে দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন যাদের হয়তো আর
চলচ্চিত্র জগতে দেখাই যায়নি। কিন্তু একটি বা দুটি ছবিতে তাঁদের অভিনয় স্মরণীয় হয়ে
আছে। সম্ভবত ৯এর দশকের প্রথম দিক থেকে পাকাপাকি ভাবে হাতে গরম জনপ্রিয় সেলিব্রিটি
অভিনেতা অভিনেত্রী দ্বারা চলচ্চিত্র জগত প্রবল প্রভাবিত হতে থাকলো। ১৯৯২ সালে
বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘তাহাদের কথা’তে মিঠুনের অবতীর্ণ হওয়া বাংলা চলচ্চিত্রের এক স্মরণীয়
ঘটনা। মিঠুনের অন্তর্ভুক্তি ভালো কি খারাপ, ‘তাহাদের কথা’ কেমন, সে আলোচনায় যাচ্ছিনা। তবে
উত্তর কলকাতার একটি সিনেমা হলে ‘তাহাদের কথা’ দ্যাখার অভিজ্ঞতার ইতিহাসটাও জানা
দরকার।
হ্যাঁ, আর
পাঁচটা মিঠুনের সিনেমাতে যেমন টিকিট ব্ল্যাক হতো, যথারীতি ‘তাহাদের কথা’তেও টিকিট ব্ল্যাক হচ্ছিল। ব্ল্যাকেই টিকিট
কাটলাম। হলে ঢোকার মুখেই দেখলাম গেটের সামনে মিঠুনের একটা বিশাল ছবি লাগানো হচ্ছে,
নিচে লেখা ‘মিঠুন ফ্রেন্ডস এ্যাসোসিয়েসন’,
তাতে গাঁদা ফুলের মালা টালা লাগানো হচ্ছেও দেখলাম। যাই হোক হলে ঢুকলাম। পর্দায় মিঠুনের অবতীর্ণ হওয়া আর প্রবল হাততালিতে হল
ফেটে পড়া ছাড়া নতুন কিছু দ্যাখার কথা ছিল কি? যদিও সিনেমাটা ‘তাহাদের কথা’, কিন্তু
কে আর ওসব খবর রাখে। কার লেখা, কে নির্মাণ করেছেন সে সব নিয়ে বিন্দুমাত্র তাদের
মাথাব্যথা ছিল না। থাকার কথাও ছিল কী? খবর একটাই...ঐ মিঠুন। তিনি যাই করবেন তাতেই
হাততালি। যারা দেখেছেন তাদের মনে আছে নিশ্চয়ই শিবনাথ নামক প্রতিবাদী চরিত্রটি
একবার প্রতিবাদ জানাতে স-শব্দে বায়ুত্যাগ
করবেন। সারা হল হাততালিতে ফেটে পড়লো। মিঠুনের এক একটি ডায়লগ আর তুমুল হাততালিতে হল
ফেটে পড়া, এই চলতে থাকলো। হয়তো প্রথম অর্ধ দেখেই বেরিয়ে পড়তাম কিন্তু সঙ্গে অন্য দুজন ছিলো
বলে অনেক কষ্টে পুরোটা দেখতে হয়েছিলো। আমার একটু বেশি মুশকিল ছিল এই যে আমি
কমলকুমার মজুমদারের ‘তাহাদের কথা’ গল্পটি পড়ে ফেলেছিলাম। আর কমলকুমার মজুমদার
আমার দু-চারজন প্রিয় লেখকদের একজন। আর একটা কথা আমার মনে হয়, কমলকুমারের গল্প উপন্যাস
এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ, অর্থাৎ একটা সৃষ্টি থেকে আমরা যা চাইতে পারি তা সম্পূর্ণই
যেন রয়েছে ওঁর লেখায়। আলাদাকরে তাকে চলচ্চিত্র বানিয়ে খুব নতুন বা ভিন্ন দিক
দেখানোর প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়না। আর দেখাতে চাইলেও সে ক্ষমতা অন্তত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছিল
বলেও মনে হয়নি। যেটা সত্যজিতের ‘পথের
পাঁচালি’ সম্পর্কেও কিছুটা বলা হত। অমন অনবদ্য লেখাকে আলাদা করে চলচ্চিত্র বানানোর
সত্যিই কি দরকার ছিল? এ প্রশ্ন সেদিন উঠেছিল। কিন্ত যেহেতু তিনি সত্যজিৎ রায়, ‘পথের
পাঁচালি’ কেমন মাপের ছবি আমরা তার প্রমান এতদিনে পেয়ে গিয়েছি। ‘পথের পাঁচালি’ আজ
ইতিহাস। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এ ছবি চিরদিনই তার জায়গায় থেকে যাবে। আজও আমাকে
বিস্মিত করে আদ্যোপান্ত শহরের প্রানকেন্দ্রে বাস করেও এমন প্রত্যন্ত নির্মল গ্রাম্য জীবনকে কী করে এতো নিখুঁত ভাবে তুলে ধরা
সম্ভব! নিজে প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছি বলে জানি কী নিখুঁত এই উপস্থাপনা। শুধু এই
একটি মুনশীয়ানায় তিনি অন্তত সবার উপরে।
পরিচালক গৌতম
ঘোষ মশায়ের মতিভ্রমে কমলকুমারের আর একটি অনবদ্য সৃষ্টিও ধর্ষিত হয়ে গিয়েছে,
‘অন্তর্জলী যাত্রা’। শেষ শব্দটা যাত্রা আছে বলেই হয়তো পরিচালক যাত্রা থেকে বেরোতে
পারেননি। ইস! মনে পড়ে ‘অন্তর্জলী যাত্রা’য় (১৯৮৭) শত্রুঘ্ন সিনহার সেই কুৎসিত
অভিনয়? বুদ্ধদেবের হাতে পড়ে কমলকুমারের
‘তাহাদের কথা’-রও এমন পরিণতি বোধহয় সেদিন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। হল
থেকে বেরিয়ে একটা কথাই মনে হচ্ছিল, হায় শিবনাথ! প্রতিবাদ জানাতে শেষে তোমাকে
বায়ুত্যাগও করতে হলো? এটাই কী আর্ট ফিল্মের বিপ্লব? আর একটা কথাও মনে হচ্ছিলো...এ
জন্যই কী ঢ্যাঙা লোকটি আর এক ঢ্যাঙাকে দিয়ে অভিনয়ের কথা কখনও ভাবেননি! তিনি
বোধহয় অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, ভক্ত অতি বিষম বস্তু, সব ভাবনার স্তর ছারখার করে
দ্যায়! আজ যদি তিনি থাকতেন সঙ্গে সিনেমা বানানোর ক্ষমতা যদি তাঁর থাকত তবে এখনকার ঢ্যাঙ্গাকে নিশ্চয়ই কাজে লাগাতেন। কারণ এ ঢ্যাঙা সে ঢ্যাঙা নয়। তাঁর চলচ্চিত্র
নির্বাচন ও অভিনয় এখন অন্যখাতে বইছে। ভক্তকুলও অনেক পরিশিলীত।
যেকথা বলছিলাম, ঐ ‘তাহাদের কথা’র পরই বোধহয়
বাংলা সিনেমায় সেলিব্রিটি অভিনেতা অভিনেত্রীর আগমনের রমরমা শুরু হলো। মনে পড়ে
মিঠুনকে নেওয়া প্রসঙ্গে বুদ্ধবাবুর এক ছেঁদো সাক্ষাৎকারের কথা। বহুবছর আগের কথা,
যেটুকু মনে আছে... তিনি নাকী একবার গাড়ি করে যাছিলেন, মিঠুনকে তেমন নাকী চিনতেন
না। কোনও এক সিনেমার হোর্ডিং-এ মিঠুনের সুঠাম দেহ দেখে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন এবং
তাকেই ‘তাহাদের কথা’র শিবনাথের ভুমিকায় অভিনয়ে নামান। হ্যাঁ, স্বদেশীকরা শিবনাথের
সুঠামদেহের বর্ণনা মূল গল্পে আছে ঠিকই কিন্তু স্থুল বুদ্ধিহীন মুখমন্ডলের বর্ণনা তো
ছিলনা! ফলে একেবারেই শিবনাথের চরিত্রের সঙ্গে মানানসই মনে হয়নি। আবার বলছি, আমি
যদি মূল গল্পটা না পড়তাম তাহলে কী মনে হতো জানিনা। তবে অনেক ভেবে দেখেছি,
সিনেমাতেও যে চরিত্র দ্যাখানো হয়েছে, স্বদেশীকরা সৎ স্নেহবৎসল পিতা, পাগলাটে সে
চরিত্রের পক্ষে মিঠুনই উপযুক্ত ছিলেন এটাও মানা যায় না।
বুদ্ধবাবু যেটা
শুরু করেছিলেন ঋতুবাবুর হাত ধরে তাই পাকাপোক্ত হলো বাংলা সিনেমায়। আর একটা
ব্যাপার, বাংলা সিনেমায় যাত্রামার্কা
পোশাকআশাকও বোধয়য় ঋতুবাবুর হাত ধরেই এসেছে। তিনি নিজে ঝকঝকে পোষাক পরতে
ভালোবাসতেন, সাজুগুজু করে গয়নাগাটি পরতেও ভালোবাসতেন। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রেও হয়তো তাঁরই দর্পণ প্রতিফলিত
হয়েছে! এ কথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিকদের পর একমাত্র ক্ষমতাবান
প্রকৃত চলচ্চিত্রবোদ্ধা হিসেবে তাঁর নামই উঠে আসবে। অথচ যেভাবে বাংলা চলচ্ছিত্র
জগৎ তাঁর দ্বারা সমৃদ্ধ হওয়ার কথা ছিল, হলো না। ব্যক্তিগত জীবন ও হরমোনের জটিল ক্রিয়ার প্রভাব
আর একমুখী দৃষ্টিভঙ্গি সব যেন ওলটপালট করে দিল। অল্প বয়সে পৃথিবী থেকে চলেও যেতে
হলো। তাঁর মননের গভীরতা যা কীনা তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রে পাইনি্ অথচ রোববারের
প্রতিদিনে আট-দশ লাইনে অতি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর আত্মোপলোব্ধির অত্যন্ত প্রয়োজনীয়
প্রকাশ দেখেছি। যা এককথায় অতুলনীয়।
যতদূর মনে পড়ে এর আগে রামানন্দ সাগর মহাশয়ের রামায়ন
মহাভারতের সাজপোষাকে দেখা গিয়েছিলো।
একেবারে ক্যালেন্ডারের হুবহু অনুকরণ। কুন্তি
যতই বৃদ্ধা হোন মুখটি ক্যালেণ্ডারের মতো কচি হওয়া চাই। চুলে এক পোচ
সাদা লাগালেই কেল্লা ফতে। পাবলিক একবাক্যে খেতে বাধ্য। গোগ্রাসে যে খেয়েছিলো কে না
জানে? আজকাল বাংলা পৌরাণিক সিরিয়ালে হরদম এ সব দেখা যাচ্ছে। যত বৃদ্ধা তত কচি। ১৭,
১৮ বছরের মেয়েরা মাথায় এক পোচ সাদা রঙ
লাগিয়ে সাদা থান পরে বৃদ্ধা মাতার অভিনয় করছেন। চামড়া কুঁচকোনো দূরের কথা গাল দিয়ে
গড়িয়ে পড়ছে মাখন। ঋতুবাবু একে চলচ্চিত্রেও প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন। তারপর কে আর পিছন
ফিরে তাকাবে? কেঊ তাকাচ্ছেওনা। এখন সৃজিতবাবুরাও একইরকম হাতে গরম পন্থা নিয়েছেন। একেবারে
ঝকঝকে চকচকে হাতে গরম সেলিব্রিটি ছাড়া তাদের আর চলে না। তিনিই নাকি এখন বাংলার একনম্বর সিনেমা করিয়ে। একবার
ভাবুনতো ‘রাজকাহিনী’ নামক যাত্রাময় ছবিটির কথা! আর এক দিকে আবার শুধুই বুম্বাময়।
ত্যানার ডেট ছাড়া নাকি ফিলিমই হবে না। আবার একবার বলি “আল্লা বড়ো চদু, গরুর গলায়
মধু”।
কিছুদিন আগে
একটি মারাঠি ছবি দেখছিলাম। Khawada (2015)। অবাক করেছে চরিত্র নির্বাচন। ‘পথের পাঁচালি’
তে চুনিবালা দেবীর নির্বাচন বহুদূরের, ২০১৫ তে কোনও সিনেমার এমন অভিনেতা
অভিনেত্রীদের দিয়ে কেউ এমন অভিনয় করিয়ে নিতে পারে, ভাবা যায় না! যারা ছবিটি
দেখেছেন, আশাকরি তারা কিছুটা বুঝতে পারছেন আমি কী বলতে চাইছি! কেন Brick Lane (2008) এ সেই মুসলিম মেয়েটির চরিত্রে প্রবাসী বাঙালি তন্নিষ্ঠা চ্যাটার্জীর
অভিনয়! অত্যন্ত সাধারণ, গ্ল্যামারের গ নেই কিন্তু কী অপূর্ব অভিনয়। দেশ বিদেশে
প্রচুর ছবি করেছেন প্রচুর পুরষ্কারও পেয়েছেন। বর্তমানের বাংলা সিনেমার আর্ট বাবুরা
ভাবতেও পারেন না এই ধরনের চরিত্রকে কাজে লাগাতে। একমাত্র ‘বিবর’ এ তাকে দিয়ে অভিনয়
করানো হয়েছিল। যদিও সে কারণ ছিল অন্য। অভিনয়-টয় ছিল সেখানে গৌন। সীমা বিশ্বাস!
ওকেও কেউ কাজে লাগালেন না। মাখনপড়া গাল,
কচি সুন্দরী না হলে চলে না এদের।
ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয় সুনীল মুখোপাধ্যায়ের মতো অসামান্য অভিনেতাকে কী দারিদ্র আর বঞ্চনায় অকালে চলে যেতে হলো! ‘গৃহযুদ্ধ’ আর ‘পার’এ তাঁর সেই সামান্য অভিনয় আজও চোখের সামনে ভাসে। চোর ছ্যাঁচড়, চাকর বাকর ছাড়া তেমন ভালো মাপের চরিত্র তার কপালে জোটেইনি প্রায়। আর একজন অসামান্য অভিনেত্রীর কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়। তিনি শ্রীলা মজুমদার। ‘আকালের সন্ধানে’ ছোট্ট একটা চরিত্র। কোনো কথা ছিলনা, শুধু অভিব্যক্তি দিয়েই যে অভিনয় উপহার দিয়েছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব বাবুরা কিছুটা তাও কাজে লাগিয়েছেন। এখনকার আর্টবাবুরা অমন গ্ল্যামারবিহীন অভিনেত্রীকে কাজে লাগাতেন? ধ্যুর।
ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয় সুনীল মুখোপাধ্যায়ের মতো অসামান্য অভিনেতাকে কী দারিদ্র আর বঞ্চনায় অকালে চলে যেতে হলো! ‘গৃহযুদ্ধ’ আর ‘পার’এ তাঁর সেই সামান্য অভিনয় আজও চোখের সামনে ভাসে। চোর ছ্যাঁচড়, চাকর বাকর ছাড়া তেমন ভালো মাপের চরিত্র তার কপালে জোটেইনি প্রায়। আর একজন অসামান্য অভিনেত্রীর কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়। তিনি শ্রীলা মজুমদার। ‘আকালের সন্ধানে’ ছোট্ট একটা চরিত্র। কোনো কথা ছিলনা, শুধু অভিব্যক্তি দিয়েই যে অভিনয় উপহার দিয়েছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব বাবুরা কিছুটা তাও কাজে লাগিয়েছেন। এখনকার আর্টবাবুরা অমন গ্ল্যামারবিহীন অভিনেত্রীকে কাজে লাগাতেন? ধ্যুর।
আর্ট ফিলিম মানেই প্রায় যাত্রা, আর আমাদের বন্ধুদের মধ্য একটা কথা খুব চালু আছে- মেনস্ট্রিম সিনেমা, প্যারালাল সিনেমা এবং ছিজিৎ এর সিনেমা...
ReplyDeleteগ্ল্যামারের জয় দেখছি এখন। এ বড় নিষ্ঠুর সত্য। রোজকার আশেপাশের চরিত্রগুলোকে গ্ল্যামারবিহীন দেখতে হচ্ছে বলেই কি? তাহলে বাস্তবের ভূমিকা ছেড়ে ফিল্ম কি এখন সাজুগুজুতে মন দিয়েছে? এত বেশি 'সাজ' দেখি যে চোখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। পুরো লেখাটাও ভীষণ মনের মত লাগল।
ReplyDeleteভালো লেখা । তবে কয়েকটা বানান ভুল চোখে লাগছে । অন্তত 'Brick Lane' ছবির নামটা ঠিক করে দিন ।
ReplyDeleteপ্রায় পূর্ণত একমত! একেবারে মোক্ষম লেখা!
ReplyDeleteভীষন সময়োপযোগী একটি লেখা।
ReplyDeleteআর্ট ফ্লিম বলতে এখন তো শুধু উদ্দাম যৌনতা বোঝায়। কাহিনী কোথায়, বেডরুমে মদের বোতল, মোবাইল ফোনের আলাপ, গাড়িতে ড্রাইভিং,অফিসের এসি রুম আর বার সিনেমা শেষ।
ReplyDelete