পিতা হতে চাই না
সে এক নারী, আমার হাত
দুটো টেনে নিয়ে তার
বুকের কাছে
প্রাণদায়িনী স্তনে
ছুঁইয়ে রেখে বলে এবার
প্রবলবেগে ঝেঁকে দাও―দেখবে পড়বে পাকা পাকা আপেল।
ঊরুর মাঝে হাত বাড়িয়ে
চলে গেছে পৃথিবীর দিকে
চেয়েছে কেবল এক ফোঁটা
বীর্য
বলেছি কোনদিন পিতা হতে
চাই না
অভাগা মানুষ জন্ম দিতে
চাই না, চাই না জনতা
আমার কোন অধ্যক্ষ নেই,
আয়না নেই, চিরুনী নেই
কেবল চুমু-ই জ্ঞান, আর
সব আলিঙ্গন ও হাসি মিথ্যা
তাড়না! যেন একপাল
ক্ষুধার্ত মানুষ
এক টুকরো রুটি নিয়ে
মারামারি করছে।
বীর্য, অমরা আর অপত্যের
কোন মূল্য নেই
এই পরম মোচন শুধু হবে
তোমার অশ্রুবিন্দু
তুমি মা হবে অন্য কোন
উপায়ে―অন্য দুঃখের দোহনে
সুমিষ্ট দুগ্ধ হবে, পেট
হবে, সোনার ডিম হবে―হও
এই দেহের পীড়া, কিছু
কামনা করি না
পৃথিবীর কোন বিছানায়
যেতে চাই না।
জন্মের
নিজভাগে রয়েছে অন্য সড়ক
হঠাৎ একদিন ঘুম ভেঙে
দেখি পৃথিবীতে আমার জন্য আর কোন পথ নেই। শহর থেকে দূর এক ঘোর অরণ্যের মুখের কাছে
অস্ত্রে আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে, আর পেছন থেকে বলা হয়েছে―এবার দৌড়া!
দৌড়াতে দৌড়াতে এসে এক
পাহাড়ের পায়ে ঘুমিয়েছিলাম। সেই সময়টুকু আমি পাহাড়কে মা বলে ডেকেছি। দুই হাত
পাশাপাশি ধরে ঝরণার জল নিয়েছি পান করে। স্থান ও কালহীন এই কোন আকারের দিকে যাই―সূর্যশুভ্রতায়―এই কোন গ্রহের
দরজা খুলে বাইরে নিয়েছি প্রবেশ! আমার দৌড়ানো পা দুটো বুকে ধরে এই পথ যায় বেদনায়। আমাকে সামনে
ঠেলে দিয়ে এই বৃক্ষগুলো গাড়ির মতো ছুটে যায় শহরের দিকে―যেখানে সবকিছু ফেলে এসে―আমাকে পেছনে ঠেলে এই শহর ঠিক দাঁড়িয়ে আছে তার জনগণ নিয়ে। মাতায়-পিতায়,
ভাইয়ে-বোনে, ভগবানে মিলেমিশে অশ্রুর সাথে এক হয়―গালি খায়, নদীর পাড়ে প্রতীক্ষিত যে কাঠের গুড়ি পড়ে আছে চেরাবার―আর কারো জন্য জানালা বানাবার! মানুষের নির্মাণ―তাদের জন্মের নিজভাগে রয়েছে অন্য সড়ক। দৌড়াতে দৌড়াতে এসে―সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতা আর অচল আগুন থেকে তুষার নেই তুলে।
দুই ভূভাগের মিলনে―তখন সব জনগণে
কান্না করতে করতে জাতীয় মাঠে জড়ো হতো। জড়িয়ে ধরতো পরস্পরের বুক। এই প্রেম আর
প্রজ্ঞার সীমানা দিয়ে পেরিয়ে আমি দৌড়াই―দৌড়াই―দৌড়াই।
শহরে
একটা তালিকা হয়েছে
শহরের দেয়ালে একটা
তালিকা টানানো হয়েছে। মানুষেরা জড়ো হয়েছে সেখানে। পরস্পরের কাঁধের ওপর দিয়ে তুমুল
প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকে নিজের নাম খুঁজতে ভীড় করে সেখানে। ছাপা কাগজে আঙুল চেপে
ওপর থেকে নিচে খুঁজে যাচ্ছে যার যা আকাঙ্ক্ষিত নাম। কেউ নাম খুঁজে
পেয়ে হাস্যধ্বনি আর শিস বাজাতে বাজাতে বাড়ি গেছে। কারও কান্না। কেউ প্রথম পাতায় না
পেয়ে গেছে পরের পাতায়, আবার নিচ থেকে ওপরে―তারপর অন্য
পাতায়। তালিকা―তালিকা―শহরে একটা তালিকা হয়েছে। সৌভাগ্য, স্বাস্থ্য আর সম্পদ
প্রত্যাশী তালিকা। আমরা কি এর চেয়ে বেশী কিছু জানতে পেরেছি? পৃথিবীর পিঠের ওপর
আমাদের আঙুলের কষ্টে―এইসব সংখ্যা ও
ক্রমের সাথে আমরা আমাদের ভবিতব্য অনাগত শীতে লুকিয়ে রাখি।
নেঙটা
ইদানিং পোশাকের প্রতি
আমার অনীহা। ঘুমঘরে নেঙটা হয়ে শুয়ে এক মিহিন অন্তিম শোভায় জাগাই হৃদয়ের সহজ সময়।
একটি আলো চিকন হয়ে এসে বুকের পাঁজর হয়ে শুয়ে থাকে। ঢাকায় যখন সন্ধ্যা নামে, এই
বিষণ্নতা ঠাণ্ডা চর্বির মতো অন্তরে বসে যায়। সারা অস্তিত্বজুড়ে পাহাড়ের ভার, গম্ভীর,
মৌন সে পাহাড়ের দিকে এক রুগ্ন মানুষের, দাসের,
নির্বীর্যের দণ্ড নিয়ে তাকিয়ে আছি।
ইদানিং চারপাশে শুধু
সন্ত্রাসের শব্দগন্ধ, অশুভ ছায়াবীথি। ইদানিং নেঙটা হয়ে থাকতে ভালবাসি।
জননাঙ্গের চুলে হাত বুলাই। হাত উঁচু করে বগল দেখি, কনুই
ভাঁজ করে পেশীর উচ্চতা দেখি। ঊরুর নীল শিরাগুলোর ফোলা দেখি, নাকভর্তি দম নিয়ে বুক উঁচু করে শ্বাস ছাড়ি। আমি হাওয়ার মতো, হালকা। এই শরীরকে আবৃত করতে নেই। শরীর নিজে থেকেই পবিত্র, যথেষ্ট অবমিশ্রিত, পরিত্যক্ত, অমাবস্যার ন্যায্য দশা, পর্যাপ্ত দুঃখের শাঁস।
ইদানিং নেঙটা এই অন্তঃশীল শরীর। বারান্দায় ঝুলে আছে নির্বোধ আন্ডারঅড়।
ভাল লাগল... বিশেষ করে 'জন্মের নিজভাগে রয়েছে অন্য সড়ক'-টি বেশি ভাল।
ReplyDeleteএই সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।