১
জিটি রোডে উঠলেই
শের শাহর ঘোড়ার ধুলো গায়ে লাগে। তখনই গ্রান্ড
ট্রাঙ্ক জোরে জোরে শের শাহর জয়ধ্বনি দিতে থাকে। রোড শো-এ নেমে পড়ে পাগড়ি পরা বাসের
সারি, প্যাঁক প্যাঁক অটোর গুমোট, আর গাড়ির অহংকারী ঝামর। রাত বাড়লে আবার জিটি রোড
ফিরে আসে শান্ত বালিকার মত। কয়েকটা মাতাল শুধু চিৎকার করে ওঠে – তফাৎ যাও মেহের
আলী, আমরা এসে গেছি।
২
শের শাহকে রাতে
‘সড়ক-ই-আজম’-এর মাঝখানে ঘুমোতে দেখে ওর ঘোড়া। ঘোড়ার ঘুম পায় না। অন্ধকার খুঁজে
ততক্ষণে কয়েক’শ লরি দাঁড়িয়ে পড়ে শের শাহকে স্যালুট দেয়। ঘোড়ার এবার হাই ওঠে। গভীর
ঘুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে শের শাহ’র মসনদ। লরিদের খামার থেকে একে একে ভাড়াটে পরীরা
নেমে গেলে আলো ফোটে। জিটি রোড হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যায়।
৩
ভোর বেলায় হাঁটার
রাজ্য জুড়ে জেগে ওঠে রোদের তেজ। ঘাম নেমে এসে ভিজিয়ে দেয় রোড, রোডের খাবলা উঠে
জেগে থাকায় মেঘ করে। সেই মেঘের নাম ‘নেই’। নেই দিনে একবার মাত্র ডাকে আকাশকে।
আকাশের গর্ত নেই, খাবলা নেই, চল্টা ওঠা নীল নেই। আকাশের নাম ‘আছে’। সারাদিন
ধরে নেই আর আছে জিটি রোডে ঘুরে ঘুরে প্রেম করে। বিকেলে বৃষ্টি নামার আগে ওদের জল
হওয়া দেখতে দেখতে একটা কাকের বাড়ি ফেরার কথা মনে পড়ে।
৪
সারা সন্ধ্যে জুড়ে
ছটফট করে শের শাহ। ঘোড়ার সান্ত্বনা কানে এসে পৌঁছয় না। ঘোড়ার হাসি থেকে কান্না
কিছুই মনের মত হয় না জিটি রোডের। এক পশলা রাগ জন্ম নেয় কংক্রিট থেকে। কয়েকটা স্টোন
চিপ ছিটকে এসে পড়ে ফুটপাথের এগ রোলের ভেতরে। সসে মাখামাখি হতে
কিঞ্চিত নরম হলে পেটে চলে যায় এক বালকের। বালক খেলা ছেড়ে এসেছে। ধুলোয় রোল খেতে
এসেছে। সসের পিচ্ছিলে হড়কে যেতে এসেছে।
৫
বাড়ি যাবে জিটি
রোড। বাড়ি গিয়ে গ্র্যান্ড ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। কার যেন পুরনো ট্রাঙ্কে তখনও জমে
আছে ‘সড়ক-ই-আজম’-এর ছেঁড়া ম্যাপ। কেউ আবিষ্কার করবে সে ইতিহাস। মৃত্যুর পরে
বিখ্যাত হয়ে যাবে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড। আমাদের বুকের ওপর দিয়ে তখনও হেঁটে যাবে
ভাঙাচোরা জিটি রোড। এক পাটি মাতালের উল্টো চটি পড়ে থাকতে দেখা যাবে ফোটোগ্রাফে।
(photography
: Raghu Rai)
আহা ! দারুণ ! জিটি রোডের সঙ্গে যেন পথ চললাম খানিকটা। তার যাপনের সঙ্গেও।
ReplyDeleteচলতে থাক
Deleteউফফ। এমন কবিতা । জি টি রোড। দুর্ধর্ষ।
ReplyDeleteভালবাসা
Deleteসরক-এ-আজম কে নিয়ে তুমি পোস্ট লিখেছিলে একবার।
ReplyDeleteএই লেখার মধ্যে উপন্যাসের বীজ আছে।
হ্যাঁ সেই পোস্ট থেকেই কবিতাগুলো লিখেছিলাম। তোমার মনে আছে দেখে ভাল লাগল।
Deleteঅনুবাদের ভাষা বড়ো প্রাঞ্জল, সাবলীল। দু'একটা দ্বিমত সত্ত্বেও বলবো মরগ্যানের মতো কবিকে যিনি বাংলায় তুলে আনার দু:সাহস দেখান তিনি প্রশংসার্হ।
ReplyDeleteঅনেক ভালো লাগল
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deletedarun laglo ..... tusti di@ avishek ghosh
ReplyDelete